'
তোমরা যারা ভূতের সিনেমা দেখতে ভালোবাসো তারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছ, ‘দ্য কনজ্যুরিং’, ‘ঘোস্টবাস্টার্স’-এর মতো সিনেমাগুলোতে ভূত শিকারিরা পিকেই মিটার, ইএমএফ মিটার কিংবা ইপিভি রেকর্ডারের মতো ইলেকট্রনিক যন্ত্র দিয়ে ভূত বা আত্মার খোঁজ করছে। কিংবা ‘১৪০৮’ সিনেমায় দেখেছো, অশরীরী কিংবা অতিপ্রাকৃত কোনো কিছুর উপস্থিতিতে হোটেলের ১৪০৮ নম্বর কক্ষের ইলেকট্রনিক যন্ত্রগুলো উদ্ভট সব কাজ করতে শুরু করে। কখনো কি ভেবেছ, এসব যন্ত্রের সঙ্গে ভূত কিংবা আত্মার কোনো সম্পর্ক আছে কি না?
একটু বৈজ্ঞানিক আলাপ করা যাক। আলাপটা তড়িেচৗম্বকীয় তরঙ্গ নিয়ে। এটা এমন এক তরঙ্গ, যা বিদ্যুৎ আর চুম্বকের শক্তি মিলিয়ে আলো বা রেডিও তরঙ্গের মতো শূন্যে ছড়ায়। বিজ্ঞান ভূত কিংবা আত্মার অস্তিত্বের দাবিকে সরাসরি নাকচ করে। কিন্তু মজার বিষয়, ভূত শিকারিরা এই তড়িেচৗম্বকীয় তরঙ্গ থেকে সৃষ্ট ক্ষেত্রের সঙ্গে ভূত কিংবা আত্মার এক অদ্ভুত সম্পর্কে বিশ্বাস করেন। যুক্তরাজ্যের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওয়ার ইলেকট্রনিক বিশেষজ্ঞ ও তড়িৎ প্রকৌশলী ড. মারিনা অ্যান্তোনিউর মতে, যখন কোনো চার্জ ত্বরান্বিত হয় তখন তড়িেচৗম্বকীয় ক্ষেত্র বা Electromagnetic Field (EMF) উৎপন্ন হয়।
আর অতিপ্রাকৃত তত্ত্বগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতেই রয়েছে ইএমএফ। সেলুলয়েডের বাইরে বাস্তবেও ভূত শিকারিদের হরহামেশাই ইএমএফ মিটার ব্যবহার করে ভূত শিকার করতে দেখা যায়। ড. মারিনা আরো বলেন, ‘এই ডিটেক্টর তড়িেচৗম্বকীয় ক্ষেত্রের তীব্রতা ও ফ্রিকোয়েন্সি পরিমাপ করতে পারে, যা পরে বিশ্লেষণ করা সম্ভব। যদি হঠাৎ তীব্রতা বেড়ে যায়, তবে তা অতিপ্রাকৃত ঘটনার ইঙ্গিত হতে পারে।
'
অথবা সাধারণ কোনো প্রাকৃতিক ঘটনাও হতে পারে। তবে শুধু ইএমএফ মিটারই নয়, ভূত শিকারিরা ইলেকট্রনিক ভয়েস ফেনোমেনন বা ইভিপির মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে আত্মাদের কাছ থেকে ভেসে আসা অস্পষ্ট শব্দ বা বার্তাগুলোকে ধারণ করে।
রুশ প্যারাসাইকোলজিস্ট কনস্টানটিনস রাউদিভ এই ধারণাকে জনপ্রিয় করেন। তবে বিজ্ঞানীরা একে স্রেফ মানসিক বিভ্রম বলে উড়িয়ে দিয়েছেন, যেখানে মস্তিষ্ক এলোমেলো শব্দের মাঝে অর্থ র্খুঁজে পেতে চেষ্টা করে। অন্যদিকে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ডিটেক্টর কয়েক হার্জ থেকে কয়েক কিলোহার্জ ফ্রিকোয়েন্সি পর্যন্ত তরঙ্গের বিকৃতি শনাক্ত করতে পারে।
ভূত শিকারিরা বিশ্বাস করেন, ভূত বা আত্মার উপস্থিতি রেডিও তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সির পরিবর্তন ঘটাতে সম্ভব। এ ছাড়া সাইকো-এনার্জি ডিটেক্টর, আয়ন ডিটেক্টর, চৌম্বকীয় ক্ষেত্র বিশ্লেষক, বৈদ্যুতিক চার্জ ডিটেক্টর, ডিজিটাল ভিডিও ক্যামেরা, স্পিরিট বক্স (এএম ও এফএম ফ্রিকোয়েন্সি স্ক্যানার), সেন্সরসহ আরো নানা যন্ত্রের সাহায্যে ভূত বা আত্মার অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন ভূত শিকারিরা। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রাদির সাহায্যে মৃতদের আত্মারা জীবিতদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। এমনকি সার্বিয়ান-আমেরিকান উদ্ভাবক নিকোলা টেসলা বিশ্বাস করতেন, রেডিওর সাহায্যে আত্মাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব। কিন্তু এসবের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বললেই চলে।
মানবসভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই অতিপ্রাকৃত বিষয়ের প্রতি মানুষের গভীর আগ্রহ। লোককাহিনি, সংস্কৃতি অথবা মানসিক বিভ্রম মানুষকে বারবার অতিপ্রাকৃত সত্তার প্রতি বিশ্বাসী করে তোলে। পূর্বে যেটাকে অতিপ্রাকৃত ঘটনা বলে মনে করা হতো বিজ্ঞান সেসব কিছুর রহস্য উন্মোচন করেছে। তার পরও মানব মনে অতিপ্রাকৃত সত্তা নিয়ে আগ্রহ এখনো কমেনি।
Publisher & Editor